ভূমিকাঃ বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) কর্তৃক ১৯৮৫ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লা ক্ষেত্র আবিষ্কার করা হয়। বড়পুকুরিয়া কয়লা ক্ষেত্রে এম/এস ওয়ার্ডেল আর্মস্ট্রং (ইউকে ভিত্তিক সংস্থা) একটি বিস্তারিত সম্ভাব্যতা ষ্টাডি সম্পন্ন করে। উক্ত ষ্টাডির অন্তর্ভুক্ত প্রধান কাজ গুলো হ‘ল ৩৩ টি বোরহোল খনন, বেসিনের সীমানা ও কাঠামো নির্ধারণ, কয়লা স্তরের বৈশিষ্ট্য, গুনগতমান, মাইনিং পদ্ধতির প্রাথমিক ধারণা, মোট মজুদ, সিমের পুরুত্ব ও ভূ-জ্বলীয় অবস্থা ইত্যাদি নির্ধারণ করা। পরবর্তীতে চাইনিজ কোম্পানি সিএমসি-এর সাথে ৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৪ সালে খনি উন্নয়নের জন্য টার্ন-কি ভিত্তিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত চুক্তির আওতায় শ্যাফট, পিটবটম রোডওয়ে উন্নয়ন সম্পন্ন হওয়ার পর ৪ জুন ২০০৫ সালে বিসিএমসিএল ও চাইনিজ কনসোর্টিয়াম (এক্সএমসি-সিএমসি) এর মধ্যে ৪.৭৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলনের জন্য ৭১ মাস মেয়াদী প্রথম ম্যানেজমেন্ট এন্ড প্রডাকশন (এমএন্ডপি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির কার্যক্রম সেপ্টেম্বর ২০০৫ হতে শুরু হয় এবং আগস্ট ২০১১ সালে শেষ হয়। উক্ত সময়ের আওতায় ৩.৬৫১ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা সেন্ট্রাল পার্ট হতে উত্তোলন করা সম্ভব হয়।
বিসিএমসিএল ও চাইনিজ কনসোর্টিয়াম (এক্সএমসি-সিএমসি)-এর মধ্যে ৫.৫০ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলনের জন্য ৭২ মাস মেয়াদী দ্বিতীয় ম্যানেজমেন্ট, প্রডাকশন, মেইনটেনেন্স এন্ড প্রভিশনিং সার্ভিসেসে (এমপিএমএন্ডপি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির কার্যক্রম ১১ আগস্ট ২০১১ হতে শুরু হয় এবং ১০ আগস্ট ২০১৭ সালে শেষ হয়। উক্ত সময়ের মধ্যে ৫.৫০৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা সেন্ট্রাল পার্ট হতে উত্তোলন করা সম্ভব হয়।
পরবর্তীতে বিসিএমসিএল ও চাইনিজ কনসোর্টিয়াম (এক্সএমসি-সিএমসি)-এর মধ্যে ৩.২০৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলনের জন্য ৪৮ মাস মেয়াদী তৃতীয় ম্যানেজমেন্ট, প্রডাকশন, মেইনটেনেন্স এন্ড প্রভিশনিং সার্ভিসেসে (এমপিএমএন্ডপি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির কার্যক্রম ১১ আগস্ট ২০১৭ হতে শুরু হয়, যা আগামী ১০ আগস্ট ২০২১ এ শেষ হবে। উক্ত চুক্তির আওতায় জুন ২০২০ পর্যন্ত ২.৩৭৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা সেন্ট্রাল পার্ট হতে উত্তোলিত হয়। অবশিষ্ট ০.৮২৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা সেন্ট্রাল পার্টের মজুদ কয়লা থেকে উত্তোলন করা সম্ভব হবে।
বড়পুকুরিয়া কোল বেসিনের উত্তর ও দক্ষিণ অংশ হতে কয়লা উত্তোলনের জন্য ২০১৭-২০১৮ সালে কনসাল্টিং ফার্ম John T. Boyd কর্তৃক একটি বিস্তারিত ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করা হয়। উক্ত স্টাডি অনুযায়ী কোল বেসিনের উত্তর অংশ হতে কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ভূতাত্ত্বিক অবস্থাঃ বড়পুকুরিয়া কোল বেসিনের বিস্তৃতি ৬.৬৮ বর্গকিলোমিটার। এই বেসিনে কয়লার মোট মজুদ ৩৯০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। সমগ্র কয়লা ক্ষেত্রের উপরিভাগ বারিন্ড ক্লে স্তর (মধুপুর ক্লে) দ্বারা আবৃত রয়েছে। এই স্তরের নিচে ডুপি টিলা স্তর বিদ্যমান। ডুপি টিলা স্তরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি পানিবাহি আপার ডুপি টিলা এবং অপরটি কাঁদামাটিযুক্ত লোয়ার ডুপিটিলা স্তর। উক্ত স্তরের নিচে কয়লাবাহি গন্ডোয়ানা স্তর অবস্থিত। এই বেসিনে মোট ৬ টি কয়লার স্তর রয়েছে, এর মধ্যে সিম-৬ এর গড় পুরুত্ব ৩৬ মিটার। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি হতে প্রাপ্ত কয়লার মান উচ্চ উদ্ধায়ী বিটুমিনাস শ্রেণী হতে সাব বিটুমিনাস শ্রেণীর অন্তর্গত। যার মূল উপাদান হচ্ছে ফিক্সড কার্বন-৪৮.৪০%, এ্যাশ- ১২.৪০%, ভোলাটাইল মেটার-২৯.২০%, মোট ময়েশ্চার-১০%, ক্ষতিকারক উপাদান সালফারের পরিমাণ-০.৫৩% এবং তাপ দহন ক্ষমতা-১১,০৪০ বিটিউ পার পাউন্ড।